করোনাভাইরা পরিস্থিতিতে ফুড সেফটি- আমাদের যা যা করা উচিত।

ফুড ডেলিভারি নেয়া কি সেইফ? শপিং ব্যাগ থেকে কি করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে? এরকমই হাজারও প্রশ্ন আমাদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। চলুন জেনে নিই, এক্সপার্ট-দের বলা কিছু ফুড সেফটি প্র্যাকটিস, যা এই মহামারীর মাঝে আমাদের মেনে চলা উচিত।
করোনাভাইরা পরিস্থিতিতে ফুড সেফটি

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি বড় বড় শহরেই অনলাইন হোম ডেলিভারি সার্ভিস-এর প্রায় সবগুলোরই প্রায় ২-৩ দিন-এর শিডিউল আগে থেকেই বুক হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা মহানগরীও এর ব্যাতিক্রম নয়। যদিও সবাই বাইরে বের হওয়া অনেকাংশেই কমিয়ে দিয়েছেন, তবুও বাইরের সাথে কন্টাক্ট একেবারেই এড়িয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে যখন বাসাতেই গ্রোসারি ডেলিভারি নেয়া হচ্ছে। ফলে সেইফ হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে ব্যাগ/কন্টেইনার থেকে সংক্রমিত হবার মতো বিভিন্ন ইস্যু এখন উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে।

ইস্যু-গুলো উঠে আসছে তার কারণও রয়েছে। ইতিমধ্যেই নভেল করোনাভাইরাস কিছু কিছু সার্ফেসে টানা কয়েকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এরকম বেশি কিছু রিপোর্ট-ও এসেছে বলেই অনেকেই উদ্বিগ্ন।

এক্সপার্ট-দের মতামত অনুযায়ী, এক্ষেত্রে কি কি করণীয় আসুন তা জেনে নিই।

বাজার/সুপারশপে গিয়ে কেনাকাটার ক্ষেত্রে এক্সপার্ট-রা বলেন, আপনার হাত যতটা সম্ভব কাছাকাছি রাখুন। সেইসাথে হাত দিয়ে নিজের মুখ-ঠোঁট ছোঁয়া থেকে বিরত থাকুন। যদিও সুপারশপ-গুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবুও যে সার্ফেস-গুলো অন্যরাও ধরছে (যেমন- ট্রলি, লিফট-এর বাটন ইত্যাদি) সেগুলো থেকে একটু সাবধান থাকা ভালো।

নীচে কিছু লক্ষণীয় পয়েন্ট তুলে ধরা হোলো-

অসুস্থ হলে কোনভাবেই সুপারশপে যাবেন না। অনলাইনে অর্ডার করুন
একে অপরের থেকে কমপক্ষে ৬ ফিট দূরত্ব বজায় রাখুন।
যে আইটেম-গুলো কিনবেন না সেগুলো ধরা থেকে বিরত থাকুন।
কম ভীড় হতে পারে এমন একটা সময়ে শপিং-এ যেতে চেষ্টা করুন। বয়স্ক-দের জন্য যদি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়, সে সময়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
শপিং-এ যাবার আগে লিস্ট করে নিন। এরপর যতো জলদি সম্ভব লিস্ট ধরে তা কিনে বের হয়ে আসুন।
ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড অথবা অন্য কোন কনটাক্ট-লেস পেমেন্ট বেছে নিন। ক্যাশ পেমেন্ট থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।

ফুড-এর প্যাকেজিং-গুলো সেইফ কি না খেয়াল করুন।

প্যাকেজিং থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ হবার এখন পর্যন্ত কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় নি। তবে এক্সপার্ট-রা বলছেন, থিওরি অনুযায়ী রিস্ক আমলে আনা উচিত এবং সে অনুযায়ী-ই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। তাঁরা এটিও বলেছে যে যদি আপনি প্যাকেজিং ধরার পরপরই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেন তবে সেটিই যথেষ্ট।

বাড়িতে খাবার এনে নিলে গ্লাভস পড়ে নিয়ে প্যাকেজিং খুলে নিতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আনপ্যাক করার আগে এবং পরে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেয়া।

আনপ্যাকিং-এর পরপরই বক্সটি ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলে দিন। প্যাকেজ রাখার স্থানটি ক্লিন/ডিসইনফেক্ট করে নিতে পারেন প্রয়োজন মনে হলে।

ফুড প্যাকেজিং নিয়ে এরপরও ভয় পাবার কোন কারণ নেই। তবুও এক্সপার্ট-রা বলেন, হাত দিয়ে মুখ-ঠোঁট ছোঁয়া থেকে বিরত থাকা এবং যেকোন কাজের আগে ও পরে সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে ভয়ের আর কোন কারণ নেই।

খাবার থেকে কি কোভিড-১৯ ছড়াতে পারে?

করোনাভাইরাস একটি রেস্পিরেটরি অর্থাৎ শ্বসনতন্ত্রের ভাইরাস- যা সংক্রমিত হবার পরে ফুসফুসে স্থান করে। নরোভাইরাস এবং সালমোনেলা পাকস্থলির এসিড-এ বেঁচে থাকতে পারে এবং পরিপাকতন্ত্রের কোষগুলোতে সংযুক্ত হতে বংশবৃদ্ধি করে।

U.S. Centers for Disease Control and Prevention-এর মতে, “মানবদেহের কোন টিস্যু-এর সাথে সংযুক্ত হচ্ছে তা হচ্ছে রোগজীবাণুর মানুষকে অসুস্থ করার একটি বড় স্ট্র্যাটেজি।”

এক্সপার্ট-রা আরও বলেন, “ভাইরাসের জন্য খাবারে বেঁচে থাকাও ততোটা সহজ নয়।”

কর্নেল ইউনিভার্সিটির infectious diseases and public health-এর এক্সপার্ট অ্যালিসন স্টাউট বলেন, “এটা একটি বেশ ঝাঁজর সার্ফেস। এর ভেতর দিয়ে কোন কিছুর বেঁচে বেরিয়ে আসা খুবই কম।”

কিন্তু সংক্রমিত ব্যাক্তিদের মলে যে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে?

আসলে, কোভিড-১৯ কাউকে তাঁদের পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে সংক্রমিত করেছে, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অ্যালিসন স্টাউট-এর মতে, আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মলে এর অস্তিত্ব পাওয়া যাওয়াটা আসলে ‘সিস্টেমেটিক ইনফেকশন’- পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাসের বেঁচে থাকার প্রমাণ নয়।

খাদ্য এবং কোভিড-১৯ এর সম্পর্ক বিবেচনায় এক্সপার্ট-রা বলেছেন যে সবচেয়ে বড় রিস্ক-টি হচ্ছে গ্রোসারি স্টোর-এ অন্য কোন কাস্টমার অথবা কর্মীদের সংস্পর্শে আসাটা, কি খেয়েছেন সেটি নয়।

এক কথায় বলা যায়, খাবার-এর ক্ষেত্রে E. coli এবং সালমোনেলা সংক্রমণের ব্যাপারেই বেশি সচেতন হতে হবে, কোভিড-১৯ নয়।

ধুয়ে নেয়া উচিত নাকি অনুচিত?

এমনিতেও যেকোন ফল অথবা সবজি ভালো করে পানিতে (ডিটারজেন্ট নয়) ধুয়ে নেয়া উচিত। তবে কিছু কিছু ফুড আইটেম না ধুয়ে নিলেও চলবে।
কখনোই মাংস, মুরগি অথবা মাছ আস্ত ধুয়ে নেয়া ঠিক নয়। আমাদের এই ব্যপারটি নিয়ে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কারণ কাঁচা মাংস সিংক অথবা কলের নিচে রাখলে অথবা ধুতে গেলে হাতের মাধ্যমে অথবা পানির ঝাপটায় সিংক-এর চারপাশে ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে। সত্যি বলতে, শুধুমাত্র পানি দিয়ে অণুজীব মেরে ফেলা সম্ভবও নয়।

ডিম-ও ফ্রিজ-এ রাখার পূর্বে ধুয়ে নেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এতে খোসার বাইরে থাক ব্যাকটেরিয়া ভেতরে প্রবেশ করার সুযোগ থেকে যায়।

এমনিতে ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রে রান্না করা খাবারের সাথে কাঁচা কোনকিছু রাখা ঠিক নয়। আর একই কাটিং বোর্ড-এ মাংস এবং সবজি কাটাও উচিত নয়। কিচেন ইউটেন্সিল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য। ব্যবহার করে থাকলে মাংস কাটার পরপরই গরম পানি এবং ডিসওয়াশার দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। করোনাভাইরাস ছাড়াও ফুড পয়জনিং থেকে বাঁচার জন্যও খাবার রান্না অথবা গরম করার ক্ষেত্রে ৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৬১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কমপক্ষে ২ মিনিট রাখা উচিত।

Leave a comment

Casinos en Argentina con Depósito Mínimo de 1000 ARS