হে বসন্ত, তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো—
আমি তোমাকে আমার পরান ভরিয়া আঁকি।
কবি নির্মলেন্দু গুন তাঁর কবিতায় বসন্তকে শান্ত হয়ে বসতে বললেও আমাদের শান্ত হয়ে বসে থাকার উপায় নেই। ব্যস্ত শহরের ছুটে চলা নাগরিকদের জীবন এমনই, মুখ তুলে আকাশ দেখার ফুসরতও হয়না অনেকের। তবু প্রকৃতির নিয়মে শীতের শেষে আসে ঋতুরাজ বসন্ত। খুব কাঠখোট্টা মানুষটাও চলার পথে কোকিলের ডাক শুনে এক মুহূর্ত থমকে দাঁড়ায়। ভোরের বাতাসে উদাসী হাওয়ার মাতলামি, ডালে ডালে নতুন পাতার নবযৌবন, কৃষ্ণচূড়া, ডালিয়ার ডাল রক্ত লাল হয়ে ওঠা- প্রতিটি মানুষের ভেতরটা স্পর্শ করে যেন বলতে চায়, প্রকৃতি নব উদ্যমে সেজে উঠছে, এবার তোমাদের পালা। তাই অবচেতন মনেই হয়তো সকালবেলা আয়নার সামনে এসে আমরা থমকে তাকাই, নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। দেখতে দেখতে আমাদের উপলব্ধি হয়, শীতের আলসেমি কারনে ঠিকমতো নিজেদের ত্বকের যত্ন নেয়া হয়নি অনেকদিন। প্রিয় পাঠক, আপনার মনেও যদি একই ভাবনা কাজ করে, তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন মন দিয়ে। কারন ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক ও চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্যের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই যারা রূপ সচেতন তারা শীতের আলসেমী ঝেড়ে ফেলুন শরীর থেকে। এখন থেকেই ত্বক ও চুলের যত্ন নেয়া শুরু করুন। ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করেই কিভাবে চটজলদি ত্বকের যত্ন নেয়া যায়- সেটাই আজ আমরা এই আর্টিকেলে তুলে ধরছি।
শুষ্ক ত্বকের যত্ন:
যাদের শুষ্ক ত্বক, তারা ভালো করেই জানেন যে, শুষ্ক ত্বকের জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্নের। তাই সবচেয়ে ভালো হয় ঘরোয়া কোনো প্যাক তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করলে। শুষ্ক ত্বকের জন্য দুধ ও কাঠ বাদামের জুড়ি নেই। প্রথমে হাফ কাপ গরম দুধে পরিমাণ মতো কাঠ বাদাম ভিজিয়ে রাখুন। কাঠবাদাম নরম হয়ে এলে সেটা পেস্টের মতো করে ফেলুন। এর সঙ্গে ১টি ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে ২০ মিনিট পুরোমুখে রেখে দিন। প্যাকটি শুকিয়ে এলে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
স্পর্শকাতর বা সেনসিটিভ ত্বকের যত্ন:
সেনসিটিভ ত্বকের জন্য খুব সাবধানে প্যাক করতে হবে। প্রথমে হাফ কাপ গরম ভাত ভালো করে পেস্ট করুন। এর সঙ্গে হাফ চা চামচ মাখন, হাফ চা চামচ টমেটোর রস মেশান। সেটা পেস্টের মতো হয়ে গেলে ১৫-২০ মিনিট মুখে লাগিয়ে নিন। সেটা শুকিয়ে গেলে ভালো কোনো ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন:
ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে তৈলাক্ত ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তাই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। ঘরোয়াভাবে প্যাক তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রথমে দেড় চামচ ওটমিল ৪ টেবিল চামচ পুদিনা পাতার রসে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর সেটাকে ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পুরোমুখে সময় নিয়ে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে তৈলাক্ত ত্বক হয়ে উঠবে মসৃণ, তেলহীন ও ঝলমলে।
চুলের যত্ন:
ত্বকের যত্নের কথা তো পড়লাম। চুলের যত্নের কথা ভুলে গেলে কিন্তু চলবে না। এই সময়ে চুল পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি, কারন বসন্তের এই সময়টা বাতাস বয় প্রচুর। বাতাসের সাথে মিশে থাকা নানারকম ক্ষতিকর পদার্থ এ সময়ে মাথায় চুলে লেগে থাকে। ফলে খুশকির প্রবণতা বেশি হয়। খুশকি ও ময়লার কারনে মাথার ত্বক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না সেজন্য এখন থেকেই যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত তেল দিতে হবে। পাশাপাশি চুল খুশকিমুক্ত রাখতে হলে নিয়মিত প্যাক ব্যবহার করতে হবে।
চুলের প্যাক:
প্রথমে হাফ কাপ আমলকী শুকিয়ে গুঁড়া করে নিন। সাথে হাফ কাপ মৌরি গুঁড়া গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সেটা কুসুম গরম অবস্থায় স্ক্যাল্পে লাগালে খুশকি চলে যাবে। এই প্যাকটা সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করুন। অবশ্যই উপকার পাবেন। আরেকটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন। এই সময়ে চুল ঝরে বেশি। তাই তেল নিয়মিত দিতে হবে। কিন্তু তেল দেয়ার ক্ষেত্রেও কিছু নিয়ম মাথায় রাখতে হবে। তেল দেয়ার আগে একটি আলাদা প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। আধা ইঞ্চি আদা, ২টা রসুন কোয়া, আস্ত একটি পেঁয়াজ পানি ছাড়া রস বের করে নিন। চুলে ভালো করে এই রস মিশিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর খাঁটি নারিকেল তেল অথবা আলমন্ড অয়েল হালকা গরম করে নিন। এরপর আঙ্গুলের ডগায় তেল মিশিয়ে নিয়ে ভালো করে চুলে ম্যাসাজ করুন। এতে করে চুলপড়া কমে যাবে।
আশা করছি, উপরের প্যাকগুলো ব্যবহার করে উপকার পাবেন। এর বাইরে মেকআপ বা পারসোনাল বিউটি কেয়ারের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন Sheba.xyz এ। বসন্ত উপলক্ষে এখানে চলছে বিভিন্ন অফারের ছড়াছড়ি।
সবশেষে বলি, যে প্যাকই ব্যবহার করেন না কেন, ত্বক ও চুল নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিকল্প নেই। শাক-সবজি ও ফলমূল খাবেন বেশি। ফাস্টফুড ও বাইরের খাবার এড়িয়ে যাবেন যথাসম্ভব। সাথে পানি খাবেন প্রচুর পরিমাণে।
সবার জীবনে বসন্ত আসুক অফুরন্ত আনন্দ নিয়ে। শাহ আবদুল করিমের মতো করে বলতে চাই, বন্ধু ও প্রিয়জনের বাড়ির ফুলের গন্ধ যেন আপনার বাড়িতে ভালোবাসার মিছিল নিয়ে আসে এটাই প্রত্যাশা।