ঘর সহজে ক্লিন বা পরিষ্কার রাখার জন্য কি কি করতে হবে তা অনেকের কাছেই চিন্তার বিষয়। আমাদের বসবাসের স্থানটি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কারণ ঘর পরিপাটি থাকলে ঘরের পরিবেশেও সুন্দর থাকবে এবং পরিবারের সদস্যদের জীবনেও তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই আজকের সেবা ব্লগে আমরা ঘর ক্লিন রাখার সহজ কিছু টিপস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো |
১. নিয়মিত পরিষ্কার করুন
ঘর ক্লিন রাখার একটি সহজ উপায় হলো অধিক সময় নিয়ে নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করা। নিয়মিত ঘর পরিষ্কার রাখলে ময়লা জমতে পারে না এবং এর ফলে ঘর ক্লিন রাখা সহজ হয়। তাই খুব দ্রুত সকাল সকাল ঘর পরিষ্কার করে ফেলা উচিত এবং নিয়মিত হাতে কিছুটা সময় নিয়ে ঘর পরিষ্কার করা উচিত।
২. বিছানা তৈরি করুন
ঘর ক্লিন রাখতে বিছানা তৈরি করা দিয়ে আপনার দিনের শুরু করতে পারেন অর্থাৎ ঘর পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে প্রথমে বিছানা পরিপাটি করে তৈরি করতে হবে। এটি অবিলম্বে শোবার ঘরটিকে আরো সুন্দর করে তোলে এবং ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করে। তাই আপনার ঘর ক্লিন রাখার জন্য প্রথমেই বিছানা তৈরি করা দিয়ে পরিষ্কারের কাজ শুরু করুন।
৩. রান্নাঘর পরিষ্কার রাখুন
ঘর ক্লিন রাখার ক্ষেত্রে রান্নাঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই রান্না করা শেষ হলে সাথে সাথে থালা বাসনগুলো ধুয়ে ফেলতে হবে এবং রান্নার সময় আশেপাশে ছিটকে পড়া তেল, মসলা, ময়লা ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে। খাবার খাওয়ার পরেও সাথে সাথে থালা বাসন ধুয়ে রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার রান্নাঘর পরিপাটি থাকবে এবং ঘর সবসময় ক্লিন রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করবে।
৪. লন্ড্রি রুটিন করুন
লন্ড্রির জন্য একটি আলাদা করে রুটিন তৈরি করে নিতে পারেন এতে করে প্রতিদিন কাপড় জমে স্তূপ হবে না এবং ঘর পরিষ্কার থাকবে। প্রতিদিনের ময়লা কাপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলা, ভাঁজ করা, আয়রন করা ইত্যাদি সকল কাজ সঠিক সময়ে করার জন্য লন্ড্রি রুটিন তৈরি করতে হবে এবং প্রতিদিনের কাপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলার ফলে ঘর ক্লিন রাখাও সহজ হবে।
৫. স্টোরেজ সলিউশন ব্যবহার করুন
ঘর ক্লিন রাখার জন্য ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র না রেখে একটি স্টোরেজ সলিউশন ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে ঘরের সকল ধরনের জিনিসপত্র বিভিন্ন স্টোরেজ সমাধান যেমন ঝুড়ি, টেবিল, র্যাক ইত্যাদির মধ্যে গুছিয়ে রাখা সহজ হবে এবং আপনার ঘরের সকল জিনিসপত্র নির্দিষ্ট জায়গায় অবস্থান করবে। এতে করে জিনিসপত্র ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে না এবং কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে না। তাই ঘর ক্লিন রাখার জন্য স্টোরেজ সলিউশন ব্যবহার করাই শ্রেয়।
৬. ওয়ান ইন-ওয়ান আউট নিয়ম অনুসরণ করুন
অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যাতে ঘরে জমে না থাকে সেজন্য ওয়ান ইন ওয়ান আউট নিয়ম অনুসরণ করতে পারেন। ওয়ান ইন ওয়ান আউট নিয়মের অর্থ হলো একটি নতুন জিনিস কিনে আনার পর একটি পুরাতন জিনিস ফেলে দেয়া। এতে করে অপ্রয়োজনীয় জিনিসে ঘর ভরে যাবে না এবং বিশৃঙ্খলা হবে না। এই নিয়ম অনুসরণ করলে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জমা প্রতিরোধ হওয়ার সাথে সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুলো সব সময় হাতের কাছে পাওয়া সম্ভব হবে এবং ঘর সবসময় ক্লিন থাকবে।
৭. সুইপ বা ভ্যাকুয়াম করুন
প্রতিদিন বাইরে থেকে আসে ময়লা ও ধুলাবালি ঘরে জমে যাতে ঘর অপরিষ্কার না হয়ে যায় তাই প্রতিদিন সুইপ বা ভ্যাকুয়াম করতে হবে। এজন্য প্রতিদিন ঘর ঝাড়ু দিতে হবে এবং পানি দিয়ে মুছতেও হবে। বিশেষ করে আপনার ঘরে যদি কোনো পোষা প্রাণী থেকে থাকে তাহলে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে ওঠে। নিয়মিত ঘর সুইপ বা ভ্যাকুয়াম না করলে ঘরে ধুলো ময়লা জমে ঘর অপরিষ্কার হয়ে থাকবে এবং এর ফলে ডাস্ট এলার্জির মতো বিভিন্ন রোগও হতে পারে।
৮. মাসিক ডিক্লাটারিং করুন
ঘর ক্লিন রাখার জন্য প্রতি মাসে অন্তত একবার ডিক্লাটারিং করতে হবে অর্থাৎ প্রতি মাসে অন্তত একবার আপনার অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বা জিনিসপত্র গুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর দান করে বা ফেলে দিতে হবে। প্রতি মাসে এভাবে ডিক্লাটারিং করলে ঘরের অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অপসারণ করা সহজ হবে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জমে স্তুূপ হয়ে গেলে ঘর ক্লিন রাখা খুবই কঠিন বিষয় হয়ে পড়ে। তাই প্রতি মাসে অন্তত একবার মাসিক ডিক্লাটারিং করা উচিত।
৯. আসবাব পত্র পরিষ্কার রাখুন
ঘরের আসবাবপত্রগুলো প্রতিদিন ধুয়ে মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে হবে। টেবিল, চেয়ার, আলমারি, ওয়ারড্রব, টিভি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি আসবাবপত্র গুলোর পৃষ্ঠ খুব ভালোভাবে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে মাসে অন্তত একবার আসবাবপত্র গুলো সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার করতে হবে। আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে তা টেকসই হবে এবং বহুদিন অক্ষত ভাবে ব্যবহার করা যাবে। আসবাব পত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে তা সহজে নষ্ট হবে না এবং ঘরের পরিবেশও সুন্দর থাকবে।
১০. ঘর পরিষ্কারের সময়সূচি তৈরি করুন
নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করার পাশাপাশি মাসে বা বছরে অন্তত একবার ডিপ ক্লিন করার জন্য ঘর পরিষ্কারের একটি সময়সূচি তৈরি করে নিতে হবে যা অনুসরণ করে প্রতি মাসে বা বছরে একবার হলেও ঘর ডিপ ক্লিন করা যাবে। ঘর ডিপ ক্লিন করা অর্থাৎ গভীরভাবে পরিষ্কার করার মধ্যে জানালা পরিষ্কার করা, মেঝে স্ক্রাব করা, দেয়ালের ধুলো ময়লা পরিষ্কার করা, ঘরের আসাবাব পত্র প্রতিস্থাপন করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এ ধরনের কাজগুলো করতে যেহেতু অনেক সময়ের প্রয়োজন হয় তাই ঘর ডিপ ক্লিন করার জন্য একটি সময়সূচি তৈরি করতে হবে এবং সেটি অনুসরণ করেই কাজ করতে হবে। এতে করে ঘর সবসময় ক্লিন রাখাও সহজ হবে।
এভাবে উপরোক্ত উপায়গুলো অনুসরণ করে আপনারা খুব সহজে ঘর ক্লিন রাখতে পারবেন এবং ঘরের সুন্দর ও ইতিবাচক পরিবেশ বজায় রাখতে পারবেন। তাছাড়া আপনি নিয়মিত সেবার ক্লিনিং সার্ভিসের সহায়তা নিতে পারে, আপনার ঘরে প্রফেশনাল লুক নিয়ে আসার জন্য।
শেষ কথা
একটি ঘর ক্লিন রাখার ক্ষেত্রে সকল কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আজকে আলোচিত এই সহজ টিপসগুলো আপনার রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে আপনি ন্যূনতম প্রচেষ্টায় একটি পরিপাটি ও সুশৃংখল ঘরের পরিবেশ বজায় রাখতে পারবেন।