নিম্নমানের এসি ব্যবহার কিংবা এসির উপর অনেক বেশি চাপ প্রয়োগ করলে, আবার অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ যাবৎ এসি অন রাখলে এসি বিস্ফোরণ বা ব্লাস্ট হতে পারে।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো এসি বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট আগুন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি এমনকি মৃত্যুর মতো ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এমতাবস্থায় সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। এরই অংশ হিসাবে চলুন sheba.xyz এর আজকের ব্লগে এসি বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে জানি এবং সচেতন হই!
এসি ব্লাস্ট হওয়ার কারণ
বর্তমান সময়ে এসি ব্লাস্ট হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো নিম্নমানের এসি ব্যবহার। এছাড়াও বৈদ্যুতিক সমস্যা, এসির উপর জানাল পর্দা পড়া ইত্যাদি বেশকিছু কারণেও এসি ব্লাস্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে জানতে হবে এসি ব্লাস্ট হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ। বিশেষ করে এসি সম্পর্কিত নিম্নোক্ত তথ্যগুলি জেনে রাখাটা বেশ জরুরি:
১. নিম্নমানের এসি ব্যবহার
নিম্নমানের এসি কিনলে তা বিস্ফোরণ হতে পারে। মনে রাখবেন যেকোনো এসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্টস হলো এর ভেতরে থাকা ফ্যান, তার এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। এসব পার্টস ঠিক না থাকলে যেকোনো এসি দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে, সার্ভিস দিতে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে অথবা ব্লাস্টও হতে পারে। আর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো উপরোক্ত সকল নেগেটিভ দিক একটি নিম্নমানের এসিতে কমন বৈশিষ্ট্য হিসাবে লক্ষ্য করা যায়। সুতরাং নিম্নমানের এসিতে দেখা যায় কারিগরি ত্রুটি কিংবা আগুণের সুত্রপাত। এজন্য একেবারে কম দামে পাওয়া এসি ব্যবহার করা উচিত নয়।
২. বৈদ্যুতিক সমস্যা
এসি কাজ করে একটি জটিল বৈদ্যুতিক লাইনের সাহায্যে। আর কোনো কারণে যদি এই লাইনে সমস্যা দেখা দেয় এসি ব্লাস্ট হতে খুব একটা সময় নেয় না। বিশেষ করে এসির সাথে কানেক্টেড ক্ষতিগ্রস্থ ফিউজ, তার এবং সংযোগকারী ইউনিটে কোনো সমস্যা থাকলে তা যেকোনো সময় ব্লাস্ট হতে পারে। এমন বিপদ থেকে বাঁচতে নিয়মিত এসির বৈদ্যুতিক কানেকশন চেক করুন।
৩. এসির উইন্ডো চেক না করা
সাধারণত এসির বিস্ফোরণ ঘটে এসির ভেতরকার পার্টস বা পরিবেশ অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে। এক্ষেত্রে এসির জানালায় ফোকাস রাখাটা জরুরি। কারণ এসির জানালা ব্লক থাকলে এর ভেতরকার বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে না। ফলে এই ধরণের ভুল যেকোনো সময় বড় কোনো দূর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে। এমন পরিস্থিতি দেখতে না চাইলে নিয়মিত এসির উইন্ডো চেক করুন। এতে কোনো পর্দা পড়েছে কিনা, বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারছে কিনা তা নিয়মিত তদারকি করুন।
৪. এসির ভুল ব্যবহার
এসির বিস্ফোরণ এড়াতে রুমের লোড অনুপাতে এসি ব্যবহার করতে হবে। ১৬-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এসি চালালে তা অল্প সময়ে রুম ঠান্ডা করে ফেলবে। সুতরাং এই তাপমাত্রায় অনেক বেশি সময় ধরে এসি অন রাখা উচিত নয়। অতিরিক্ত সময় ধরে কম তাপমাত্রায় এসি অন থাকলে রুমের অতিরিক্ত ঠান্ডা তাপমাত্রার কারণে এসির ভেতরটা গরম হয়ে যেতে পারে।
৫. রক্ষণাবেক্ষণের অভাব
যেকোনো মেশিনারি প্রোডাক্ট নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হয়। এসির ক্ষেত্রেও ঠিক একই লজিক প্রযোজ্য। যাইহোক! এসিকে নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। হতে পারে তা ২ সপ্তাহ পরপর কিংবা প্রতি মাসে। বিশেষ করে মাসে মাসে এসির কম্প্রেসারের ভেতরে ময়লা আটকে জ্যাম হয়ে আছে কিনা তা চেক করাটা জরুরি। তাছাড়া যেকোনো কারিগরি ত্রুটি চোখে পড়লে দ্রুত ভালো মেকানিকের সাহায্য নিতে হবে। পাশাপাশি বাদ দিতে হবে নিয়মিত হারে এসির সার্ভিসিং না করানোর বদ অভ্যাস। এতে করে এসির গ্যাসে আগুন লাগার মতো বিপদজনক পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রয়োজন পড়বে না।
তাছাড়া নিত্য দিনে এসি ব্যবহারের ফলে যেকোন সমস্যা তৈরি হলে sheba.xyz টিম আছে আপনার পাশে। যেকোন এমর্জেন্সি সময়ে এসি সার্ভিসিং এর জন্য Sheba.xyz এর সাহায্য নিন।
৬. রেফ্রিজারেন্ট লিক
রেফ্রিজারেন্ট (Refrigerant) হলো এসির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা বাতাস থেকে তাপ সংগ্রহ করে পূনরায় সেই বাতাসে ঠান্ডা করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়। এই রেফ্রিজারেন্ট বিভিন্ন পাইপের সাহায্যে কাজ করে। এসব পাইপ মাঝেমধ্যেই লিক হতে পারে। আর এর যেকোনো একটি পাইপ লিক হলেই এসি ব্লাস্ট হয়। তাছাড়া লো রেফ্রিজারেন্টে এসি ব্যবহার করলে তা এসির কম্প্রেসার এবং অন্যান্য অংশের ক্ষতি করে। এসির ভেতরকার অংশকে গরম করে তোলে এবং সবশেষে তা এসি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তবেই ক্ষান্ত হয়।
৭. প্রাকৃতিক দূর্যোগ
এসি বিস্ফোরণের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো প্রাকৃতিক দূর্যোগ। ঝড় এবং অন্যান্য তীব্র আবহাওয়ার সময় যখন কারেন্ট আসা-যাওয়া করে তখন আপনার এসির ভেতরকার কোনো পার্টস ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সময়মতো চেক না করার কারণে আবার সেই ক্ষতিগ্রস্ত পার্টস ডেকে আনে এসি ব্লাস্টের মতো বিপদজনক পরিস্থিতি। এই ধরণের বিপদ থেকে বাঁচতে প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় এসি আনপ্লাগ করুন। আর যদি ব্যবহার করতেই হয় তা অল্প সময় ব্যবহার করেই বন্ধ করে দিন।
৮. ময়লাযুক্ত কয়েল
এসি ব্লাস্টের কারণ হিসাবে নোংরা কয়েলের ব্যাপারেও সতর্ক হতে হবে। এসির কয়েলকে সাধারণত কনডেন্সার কয়েল বলা হয়। যা সাধারণত এসির কুলিং সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। এই কয়েলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাতাস থেকে তাপ সরিয়ে দেওয়া। আর এভাবে তাপ সরিয়ে দিতে এসির কয়েলে ময়লা আটকে থাকে। ফলে এই ছাঁচ টাইপের পার্টসটির ভেতরকার অংশ গরম হয়ে এসি ব্লাস্টের মতো দূর্ঘটনা ঘটায়।
যে যে কারণে এসি বিস্ফোরণ হতে পারে সে সব কারণ তো জানলেন!! এবারে তা বাস্তব জীবনে মেনে চলার পালা। মনে রাখবেন মেশিনারি জিনিসপত্রের ক্ষতি হয় অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগে। সুতরাং অতিরিক্ত এসি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। টানা এসি ব্যবহার না করে কেবল প্রয়োজনের সময়েই এটি ব্যবহার করুন। আর নির্দিষ্ট সময় পরপর অবশ্যই এসি পরিষ্কার করার চেষ্টা করুন। সেই সাথে মাঝেসাঝে কোনো মেকানিক আনিয়ে চেক করিয়ে নিন। এতে করে হুটহাট এসি ব্লাস্টের মতো জটিল কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। এরকম টিপস পেতে সর্বদা সাথে থাকুন sheba.xyz ব্লগের সাথে।