নিরাপদ পানির সুব্যবস্থা করতে পানির ট্যাঙ্কের সঠিক পরিচর্যা অতীব জরুরী। নিয়মিত পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কার না রাখলে ট্যাঙ্কের গায়ে শৈবাল ও ব্যাকটেরিয়ার জন্মে পানির সাথে মিশে যায়। এই পানি দেখতে যতই পরিষ্কার লাগুক না কেন তা পান করলে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন পানির ট্যাঙ্ক অপরিষ্কার রাখলে পাম্প এবং ফিল্টারের সমস্যা হতে পারে যা খুবই ব্যয়বহুল। পানির ট্যাঙ্ক নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিৎ কিন্তু কতদিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে এটার বাধা ধরা কোনো নিয়ম নেই। তবে এটা অনেকাংশে নির্ভর করে পানির ট্যাঙ্ক এর ধরন এবং এর ব্যবহারের উপর। আজকের সেবা ব্লগে আপনি পানির ট্যাঙ্ক কতদিন পরপর পরিষ্কার করা প্রয়োজন তা জানতে পারবেন।
খাবার পানির ট্যাঙ্ক
যে ট্যাঙ্কে খাবার পানি সংরক্ষণ করা হয় স্বাস্থ্যসুরক্ষায় সে ট্যাঙ্কের অতিরিক্ত যত্ন নেয়া প্রয়োজন। এই ট্যাঙ্কগুলো বছরে অন্ততঃ একবার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কার করার পর অবশ্যই জীবাণুমুক্তকরণ ক্লোরিন ব্লিচ ব্যবহার করা প্রয়োজন যাতে পানিবাহিত রোগের বিস্তার রোধ করা যায়। এছাড়া প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর পরীক্ষা করা উচিৎ পানিতে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়েছে কিনা।
বৃষ্টির পানির ট্যাঙ্ক
বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ট্যাঙ্কগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না রাখলেও ১-২ বছর অন্তর অন্তর পরিষ্কার করা উচিৎ এবং খাবার পানির ট্যাঙ্কগুলোর মত প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ব্যাকটিরিওলজিকাল স্যাম্পলিং করা উচিৎ। কেননা বৃষ্টির পানিতেও ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
অন্যান্য ব্যবহারের পানির ট্যাঙ্ক
এই ট্যাঙ্কগুলোর পানি দ্বারা সাধারণত হাত-পা ধোয়া, গোসল ও টয়লেটের ফ্ল্যাশ করার মতো কাজগুলো করা হয়। এই ট্যাঙ্কগুলো নিয়মিত পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজন না হলেও অবশ্যই কয়েক মাস পরপর দেখা উচিৎ ট্যাঙ্কের পানি ঠিক কি অবস্থায় আছে। কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হলে সাথে সাথে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্তকরণ করা উচিৎ। এই ট্যাঙ্কগুলো আসলে কতদিন পরপর পরিষ্কার করা উচিৎ এটা পানির ব্যবহার, ধরন এবং রাসায়নিক গঠনের উপর নির্ভর করে।
পানির টাঙ্কে ইন্সপেকশন প্রয়োজন হলে বুঝার উপায়
নিয়মিত ইন্সপেকশন করার পাশাপাশি যদি ট্যাঙ্কগুলোর সাথে নিম্নলিখিত কোনো সমস্যা পরিলক্ষিত হয় তবে অবশ্যই আপনার ট্যাঙ্কগুলোর অতিরিক্ত ইন্সপেকশনের প্রয়োজন হবে।
- যদি ট্যাঙ্কের আশেপাশে কন্সট্রাকশন জনিত কোনো কাজ করা হয়ে থাকে যা থেকে ট্যাঙ্কের ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।
- যদি পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে।
- যদি ট্যাঙ্কে মস জাতীয় কোন উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায় কিংবা পানির নিচে পলি জমতে দেখা যায় অথবা পানির রঙ পশুর মল-মূত্রের মতো দেখতে লাগে।
ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের পদ্ধতি
১. ট্যাঙ্কের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা
সবার প্রথমে ট্যাঙ্কের কলটা খুলে ভেতরের সমস্ত পানি বের করে নিতে হবে। সব পানি বের হয়ে গেলেও নিচে জমা থাকা পানিটা বের করা একটু কষ্টসাধ্য৷ এরজন্য প্রথমে প্লাস্টিকের মগ ব্যবহার করা যেতে পারে। একদম তলানিতে লেগে থাকা পানিটা বের করতে ভ্যাকুয়ামের সাহায্য লাগবে। এরপর ট্যাঙ্কটা শুকনো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিয়ে কিছুক্ষণ রোদে শুকাতে দিতে হবে।
২. ট্যাঙ্কের ভেতর পরিষ্কার করা
গরম পানি ও ডিটারজেন্ট মিশিয়ে একটা ক্লিনিং সলিউশন তৈরী করে নিতে হবে। এই সলিউশনের পরিমাণ নির্ভর করবে ট্যাঙ্কের সাইজ অনুযায়ী। একটা নাইলনের ব্রাশ বা স্পঞ্জ সলিউশনে ডুবিয়ে ট্যাঙ্কের ভেতরটা ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। ছোট বা বড় ব্রাশ নিয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী আড়াআড়ি বা লম্বালম্বিভাবে ঘষতে হবে। তবে স্টিলের ব্রাশ বা স্পঞ্জ ভুলেও ব্যবহার করা উচিৎ না। এগুলো ট্যাংকের প্লাস্টিকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. ট্যাঙ্কের দেয়াল পরিষ্কার করা
ট্যাঙ্কের দেয়াল পরিষ্কারের দিকে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত। ক্লিনিং সলিউশন দ্বারা যদি ট্যাঙ্কের দেয়াল পরিষ্কার না হয় তাহলে বেকিং সোডা দেয়ালে ছিটিয়ে দিতে হবে। যতক্ষণ না পরিষ্কার হচ্ছে ততক্ষণ ব্রাশ দিয়ে ঘষতে হবে। জয়েন্ট এবং কর্ণারের কঠিন ময়লা তোলার জন্য ছোট ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘষতে হবে পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত।
৪. ধৌত করা
ট্যাঙ্কের ভেতরটা পুরোপুরি পরিষ্কার হওয়ার পর পাইপের সাহায্যে পানি দ্বারা সব ময়লা ধুয়ে ফেলতে হবে। জয়েন্ট এবং কর্ণারে ক্রমাগত পানি স্প্রে করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত এইসব স্থানের ময়লা ধুয়ে না যাচ্ছে৷
এরপর ট্যাংকের কল ছেড়ে সমস্ত ময়লাগুলো বাইরে ফেলে দিতে হবে৷ ঠান্ডা পানির বদলে গরম পানি দিয়ে ট্যাঙ্ক ধৌত করলে দ্রুত পরিষ্কার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গরম পানি ট্যাঙ্কে ঢেলে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে; এরপর সমস্ত ময়লা সমেত পানি কল ছেড়ে বের করে আনতে হবে। প্রয়োজনমতো বেশ কয়েকবার পানি বদলে বদলে ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে হবে। যাতে ট্যাঙ্কে অবশিষ্ট কোনো ময়লা না থাকে এবং ডিটারজেন্টের গন্ধ যেন পুরোপুরি দূর হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
বড় ট্যাঙ্কের তলানির ময়লা পরিষ্কার করতে ভ্যাকুয়াম এবং শুকনো তোয়ালে অথবা মপের প্রয়োজন হতে পারে।
৫. ট্যাঙ্কের পাইপ পরিষ্কার করা
ট্যাঙ্কের পাইপে একটু ক্লিনিং সলিউশন ঢালতে হবে। এরপর ভেতরের ময়লা সরানোর জন্য পাম্পের সাহায্যে সলিউশনটা পাইপের ভিতর পাম্প করতে হবে। ঈষৎ উষ্ণ গরম পানি পাম্প করে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ময়লা পরিষ্কার না হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ক্লিনিং সলিউশন ও গরম পানি ক্রমাগত পাম্প করে করে পরিষ্কার করতে হবে।
ট্যাঙ্ক জীবাণুমুক্তকরণ পদ্ধতি
পরিষ্কারের পরে ট্যাঙ্কটি অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সবার প্রথমে ট্যাঙ্কে চার ভাগের তিন ভাগ পরিষ্কার পানি দিয়ে ভর্তি করতে হবেঅ। তারপর এতে পরিমাণ অনুযায়ী ক্লোরিন ব্লিচ ঢালতে হবে। এই ক্লোরিন ব্লিচ ঢালার নির্দিষ্ট একটা পরিমাপ রয়েছে যেমন-
- ২৫০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য ৪ কাপ ব্লিচ।
- ৫০০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য আধা গ্যালন ব্লিচ।
- ৭৫০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য পৌনে এক গ্যালন ব্লিচ।
- ১০০০ গ্যালন ট্যাঙ্কের জন্য পুরো এক গ্যালন ব্লিচ লাগবে।
ব্লিচিং পাউডার দেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ পানি দ্বারা পূর্ন করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে এই ব্লিচ যেন পুরোপুরি ভাবে মিশে যায়। এভাবেই ২৪ ঘন্টা ক্লোরিন ব্লিচের মিশ্রণ ট্যাঙ্কের ভেতরেই রাখতে হবে। এরপর কল খুলে দিয়ে সমস্ত পানি বের করে দিতে হবে। তলানির পানির জন্য ভ্যাকুয়াম ও শুকনো তোয়ালে ব্যবহার করতে হবে।
ট্যাঙ্ক শুষ্ককরণ
ট্যাঙ্কে পানি ভরার আগে ট্যাঙ্কটা ভালোমতো শুষ্ক করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ৭-৮ ঘন্টা ট্যাঙ্ক খালি রাখতে হবে তাহলে ক্লোরিন ব্লিচের গন্ধ থাকবে না।
সতর্কতা
পানির ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনভাবেই এর ময়লা বা কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি কোন গাছপালা, অন্য কোন পানির উৎস, মানুষ, প্রাণীর সংস্পর্শে না আসে। এছাড়া ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করাও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কাজেই পরিষ্কারের সময় পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা উচিৎ। আশা করি পানির ট্যাঙ্ক কতদিন পরপর পরিষ্কার করা প্রয়োজন, কীভাবে করা উচিত সব বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। সেই প্রফেশনাল সাপোর্টের জন্য sheba.xyz টিমের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।