এয়ার কন্ডিশনার বা এসি যেমন দম বন্ধ করা গরমে শান্তি দেয়, তেমনি মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে বিড়ম্বনায়ও ফেলে। হুটহুাট নষ্ট হয়ে যাওয়া, গ্যাস কমে যাওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা যায়। তখন শরণাপন্ন হতে হয় মেকানিকের কাছে। এতে যেমন টাকা খরচ হয়, তেমনি অপচয় হয় সময়। তবে এসি ব্যবহারে একটু সচেতন হলে বাড়তি ঝামেলা নিতে হবে না। এসি’র সাধারণ সমস্যাগুলোর এবং সমাধান জানা থাকলে যন্ত্রটি ব্যবহার করা যায় নিশ্চিন্তে। তবে এজন্য আপনার জানতে হবে এসি’র সাধারণ সমস্যাগুলো কী!
গ্যাস লিকেজ
মুলত এসি ইন্সটলেশন যদি সঠিক নিয়মে না হয় কিংবা ইনডোর এবং আউটডোরের মধ্যে স্থাপিত গ্যাস বাইপাস পাইপ (কপার পাইপ) যদি নিম্ন মানের হয় কিংবা ইন্সটলেশনের সময় যদি কোনও ত্রুটি থাকে তাহলে গ্যাস লিকেজ হতে পারে। যদি আপনার এসিতে গ্যাস লিকেজ হয়ে থাকে তাহলে সেটি না সাড়িয়ে গ্যাস চার্জ করলেই কিন্তু এই সমস্যার সমাধান হবে না। এর জন্য আপনাকে দক্ষ টেকনিশিয়ানের সাহায্যে লিকেজ নির্ণয় করে তারপর গ্যাস চার্জ করাতে হবে অন্যথায় আপনার এসি মেইন্টেনেস খরচ বৃদ্ধি পাবে।
অপ্রত্যাশিত ড্রেনেজ
এসি’র ইনডোর ইউনিটের সাথে একটি ড্রেনেজ পাইপ সংযুক্ত থাকে যার মাধ্যমে এসি থেকে পানি বের হয়। এসি’র ত্রুটিপূর্ণ ইন্সটলেশন হলে ড্রেনেজ লাইন ঢালু এবং বাঁধামুক্ত না থাকার ফলে পানি বাহিরে না পরে রুমের ভিতরে পরতে পারে। তাছাড়া দীর্ঘদিন এসি’র সার্ভসিং না করার কারণে ড্রেনেজ পাইপটি বন্ধ হয়ে যায়, ফলে এসি’র পানি রুমেই পরে।
বৈদ্যুতিক সমস্যা
এসি’র বৈদ্যুতিক অংশ কম্প্রেসর, ক্যাপাসিটর, ফ্যান, এসি’র সার্কিটের সমন্বয়ে গঠিত এবং প্রতিটি ইউনিট একটা আরেকটার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এসিতে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার এবং অনিয়মিত সার্ভিসিং এসি’র এই বৈদ্যুতিক অংশগুলয় প্রভাব ফেলে। এর ফোলে আপনার এসিটি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে অথবা বড়ো ধরনের দূর্ঘটনার ঘটতে পারে।
বাড়তি বিদ্যুৎ বিল
এসি’র বিদ্যুৎ বিল বেশি আসা নন-ইনভার্টার এসি’র একটি কমন সমস্যা। নিয়মিত এসি’র যত্ন অথবা সার্ভিসিং না করার কারণে এসি’র এনার্জি এফিসিয়েন্সি রেশিও (EER) কমে যায়, যার ফলে জন্য কম্প্রেসর দীর্ঘ সময় চালু থাকে। এতে করে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়, তারপর দেখা যায় মাস শেষে আপনাকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল গুনতে হচ্ছে।
এসি’র রিমোটে গণ্ডগোল
এসি চালু করার সময় মাঝে মাঝে দেখা যায় রিমোট দিয়ে এসি চালু হচ্ছে না কিংবা এসি চলছে কিন্তু ঠান্ডা হচ্ছে না। যদি রিমোট থেকে সিগন্যাল এসিতে না যায় অথবা রিমোটের ব্যাটারি দূর্বল হয় তখন আপনার প্রয়োজনের মুহূর্তে আপনি এসি চালু করতে পারবেন না। তাছাড়া রিমোটের ফাংশন চেঞ্জ হয়ে গেলে এসি চালু থাকার পরও, এসি থেকে আপনি আশানুরূপ ঠান্ডা বাতাস পাবেন না।
এসি থেকে দুর্গন্ধ
অনেক সময় এসি থেকে বাজে গন্ধ পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এসি থেকে কেন দুর্গন্ধ বের হয়? যদি আপনার এসি দীর্ঘ সময় সার্ভিসিং না করা হয়, তখন এসির ইনডোর ইউনিটের এয়ার ফিল্টার, ব্লোয়ার, পানির ট্রে, ইভাপোরেটর কয়েলে অতিরিক্ত ধুলা-ময়লা জমে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম হয় কিংবা ইনডোর ইউনিটের ইভাপোরেটর কয়েল থেকে গ্যাস লিকেজের কারণে এসি থেকে রুমের ভিতর দুর্গন্ধ আসে।
এসি থেকে বিরক্তিকর শব্দ
এসি’র ইনডোর ইউনিটের ব্লোয়ার, সুইং মোটর চলার সময় এদের মধ্যে বিদ্যমান বিয়ারিং কিংবা প্রিমিয়াম ক্ষয় হয়ে গেলে অথবা এসির কভার কম্পনের ফলে শব্দ তৈরি হতে পারে।
এই হচ্ছে এসি’র কিছু প্রাথমিক বা কমন সমস্যা। এই সমস্যাগুলোর সমাধানও খুব জটিল না যদি আপনার উপায় জানা থাকে। তাহলে এসি’র সমস্যার প্রাথমিক সমাধান সম্পর্কে জানা যাক।
আলাদা সার্কিট ব্রেকার
যেকোনো ধরনের ইলেকট্রিক্যাল ক্ষতি থেকে ডিভাইসগুলোকে রক্ষা করাই সার্কিট ব্রেকারের কাজ। কোনো কারণে যদি এসি কাজ না করে, তাহলে প্রথমেই সার্কিট ব্রেকার চেক করতে হবে। অনেকগুলো ডিভাইস একটি সার্কিট ব্রেকারে সংযুক্ত থাকলে অনেক সময় এসি কাজ করে না। তাই এসি’র জন্য আলাদা সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা ভালো।
ফিল্টার পরিষ্কার করা
এসি’র ফিল্টার নিয়মিত বদলানো উচিত। এসি’র এই অংশটি যতো পরিষ্কার থাকবে, যন্ত্রটি ততো সচল থাকবে। নোংরা ও ময়লাযুক্ত ফিল্টার এসি’র জন্য সবচেয়ে বড়ো শত্রু। তাই খেয়াল রাখতে হবে এসি’র ফিল্টার যেন সবসময় পরিষ্কার থাকে।
এসি বন্ধ করা
যেকোনো ধরনের সমস্যা হলে প্রথমেই এসি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। এসিতে ছোট বড়ো যেমন সমস্যাই দেখা দিক, সমস্যা নিয়ে এসি চালানো যাবে না। যদি সমস্যা নিয়েই এসি চালানো হয় তাহলে দেখা যাবে সমস্যা বড়ো হয়।
ইউনিট ফ্যান পরিষ্কার রাখা
এসিতে থাকা ফ্যানের কাজ ক্রমাগত গরম বাতাস বের করে দেওয়া। দীর্ঘদিন ধরে এ কাজটি করার ফলে অনেক ধুলাবালু ও ময়লা জমে এই ফ্যানে। এ কারণে ফ্যান থেকে বিরক্তিকর শব্দ হয়, এসি’র স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ঝামেলা হয়। তাই মাঝে মাঝে এসি’র ফ্যান চেক করুন, তাতে ময়লা থাকলে দেরি না করে পরিষ্কার করুন।
কমপ্রেসর ফিন পরিষ্কার রাখা
ভেতরের গরম বাতাস বাইরে বের করে দেওয়াই কমপ্রেসরের কাজ। অনেকদিন ব্যবহারে এই কমপ্রেসরে ময়লা জমে। ফলে স্বাভাবিকভাবে গরম বাতাস বের না হওয়ায় ঘর ঠান্ডা হয় না ঠিকমতো। তাই ব্রাশ দিয়ে আলতোভাবে এসির এই অংশ নির্দিষ্ট সময় পর পরিষ্কার করতে হবে। টেপ দিয়ে শক্তভাবে ঢেকে দিন।
ইলেকট্রিক ভোল্টেজ চেক করা
ঘরের ইলেকট্রিসিটি ভোল্টেজ যদি কম থাকে, তাহলে আপনার এসি যখন তখন নষ্ট হতে পারে। তাই ঘরে এসি বসানোর আগে ইলেকট্রিক ভোল্টেজ সম্বন্ধে জেনে নিতে হবে। এসি’র ম্যানুয়ালে যেই ভোল্টেজ সাজেস্ট করা হয় সেই ভোল্টেজেই এসি চালানো নিশ্চিত করতে হবে।
জমে থাকা বরফ পরিষ্কার করা
এসি’র ভেতরে যদি বরফ জমে থাকে, তাহলে এসি ঠিকমতো কাজ করবে না। বরফ জমলে এসি বন্ধ করে শুধু ফ্যানটি ছেড়ে রাখতে হবে। এতে জমাট বরফ ভাঙতে থাকবে এবং একসময় ঝামেলার সমাধান হয়ে যাবে।
ইউনিট ব্যাটারি বদল
বাসা কিংবা অফিসের এসি যদি ব্যাটারিচালিত হয়, তবে তা নির্দিষ্ট সময় পর বদলাতে হয়। তাই কখনো যদি এসি কাজ না করে, তাহলে ভয় না পেয়ে ব্যাটারি চেক করতে হবে।
ড্রেনেজ পাইপ পরিষ্কার রাখা
এসির কাজ হলো ঘরের স্বাভাবিক বা গরম আবহাওয়াকে ঠান্ডা ও আরামদায়ক আবহাওয়ায় রূপান্তরিত করা। এসি ব্যবহারে এসিতে পানি জমে, সেই পানিকে ড্রেনেজ পাইপের মাধ্যমে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। এ কাজের সময় পাইপে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা জমে। ফলে নিয়মিত পরিষ্কার না করলে এসি’র পার্ফরমেন্সে ব্যাঘাত ঘটে। নিয়মিত ড্রেনেজ পাইপ পরিষ্কারের মাধ্যমে এসির সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
এই হচ্ছে এসি’র কমন সমস্যা এবং সম্ভাব্য সমাধান। তবে এই সমস্যা আর সমাধানে যদি আপনি সময় দিতে না পারেন বা আপনি যদি চান সমস্যাগুলোর সমাধান এক্সপার্টের হাতে হোক। তাহলে আপনি Sheba.xyz-এর সেবা নিতে পারেন। ঘরে বসেই Sheba.xyz–এ ডাকতে পারবেন এক্সপার্ট টেকনিশিয়ান। অভিজ্ঞ লোকের হাতে হবে আপনার এসি’র যত্ন। সঠিক যত্নে সেরা সার্ভিস দিবে আপনার এসি, বছরের পর বছর।