অসাবধানতাবশত মানবজীবনে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তেমনই একটি অসাবধানতার নাম কারেন্ট শক। দূর্ঘটনা কিংবা অসাবধানতার ফল…যাই বলি না কেনো কারেন্ট শক লাগলে আপনাকে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।  এই সময়ে কি কি টিপস ফলো করলে জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে এবং কি কি ভুল করা যাবে না তা নিয়েই সাজিয়েছি আমাদের আজকের আর্টিকেল। তাই আসুন sheba.xyz এর আজকের ব্লগে কারেন্ট শক লাগলে যে ভুলগুলো করা যাবে না তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি। 

১. বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তিতে টাচ করা যাবে না

কারেন্ট শক লাগলে শুরুতেই আমরা যে ভুল করি, সেটি হলো শক খাওয়া ব্যাক্তিকে টাচ করে বাঁচাতে যাওয়া। মনে রাখবেন দূর্ঘটনায় দিশা হারিয়ে কোনোভাবেই শক খাওয়া ব্যাক্তিকে টাচ করা যাবে না। নতুবা যিনি শক খেয়েছেন তার সাথে সাথে আপনার জীবনও সংশয়ে পড়ে যাবে। 

২. মেইন সুইচ অফ না করা

যিনি শক খেয়েছেন তাকে বাঁচাতে অনেক সময় আমরা তার দিকেই অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে ফেলি। ফলে কারেন্টের মেইন সুইচ অফ করার বিষয়টি পুরোপুরি ভুলে যাই। কারেন্ট শক লাগলে এই ভুলটি কখনোই করা যাবে না। সেহেতু শুরুতে মেইন সুইচ অফ করে দিতে হবে। এতে করে যিনি শক খেয়েছেন তাকে বাঁচানোর চান্স তুলনামূলকভাবে অনেকটা বেড়ে যাবে। 

৩. বিদ্যুৎ অপরিবাহী জিনিসের সাহায্য না নেওয়া

বিপদের মুহুর্তে আমরা দ্রুত বিদ্যুৎ অপরিবাহী জিনিস নিশ্চিত করতে সক্ষম হই না।  যাইহোক! আপনার আশেপাশেই আপনি এই ধরণের বস্তু পাবেন। যেমন শুকনো কাগজ, খবরের কাগজ, যেকোনো ধরণের উলের কাপড়, শুকনো কোনো কাঠের টুকরা, ইত্যাদি। কারেন্টের শক লাগলে এসমস্ত জিনেসের সাহায্যে শকে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে কারেন্টের উৎস থেকে ধাক্কা দিয়ে আলাদা করে দিতে হবে। সুতরাং আপনাকে এমন কোন জিনিস খুঁজে বের করতে হবে।  

৪. সময় নষ্ট করা যাবে না

কারেন্ট শকপ্রাপ্ত ব্যাক্তিকে বাঁচাতে অনেকেই সময় নষ্ট করেন যেমন অ্যাম্বুলেস কল করে হয়তো অপেক্ষা করছেন। আর অ্যাম্বুলেস আসার ওই সময়টাতে ভাবেন— অপেক্ষা ছাড়া এখন হয়তো আর কিছুই করার নেই! অথচ এই সময়টিকেই সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে রোগীকে বাঁচানোর সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। এই সময় কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে। মূলত একজন কারেন্টের শকপ্রাপ্ত ব্যাক্তির প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে আপনাকে যেসব স্টেপ ফলো করতে হবে তা হলো: 

  • কারেন্ট শক লাগার সাথে সাথে রোগীর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করুন
  • তারপর অবস্থা বুঝে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যান

মনে রাখবেন কারেন্ট শক লাগার পরবর্তী কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করলে উক্ত ব্যক্তির বাঁচার সম্ভাবনা ৭০% বেড়ে যায়। 

৫. হৃৎপিণ্ড চেক না করা

প্রাথমিক চিকিৎসার অংশ হিসাবে রোগীর কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি রোগীর হৃৎপিণ্ড চেক করতে হবে। যদি কোনো কারণে হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায় সেক্ষেত্রে রোগীকে শুইয়ে তার বুকের ওপর জোরে জোরে চাপ দিতে হবে।  একই সময় প্রয়োজনে রোগীর মুখ দিয়ে বাতাস প্রবেশ করাতে হবে। এতে করে বন্ধ হয়ে যাওয়া হৃৎপিণ্ড চালু হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। 

৬. হাসপাতাল এড়িয়ে চলা

কারেন্ট শক লাগার পর আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হলেও অনেক সময় রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় না। প্রয়োজন নেই ভেবেই যে বিষয়টিকে এড়িয়ে চলছেন কিছুদিন পর সেই একই বিষয়ের কারণে জীবন পড়বে সংকটের মুখে। বলছিলাম কারেন্ট শক লাগার পরপরই রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা। সুস্থ হয়ে উঠলে এই সময়টাতে অন্তত চেক-আপের খাতিরে হলেও রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। 

বৈদ্যুতিক শক এর প্রাথমিক চিকিৎসাসমূহ এবং পরবর্তী করণীয়গুলি কি কি? 

কারেন্ট শক লাগলে যে ভুলগুলো করা যাবে না তা সম্পর্কে তো জানলেন! এবারে এমনকিছু স্টেপ সম্পর্কে আলোচনা করবো যা বৈদ্যুতিক শক এর প্রাথমিক চিকিৎসা হিসাবে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি জানবো প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়াও কোন কোন স্টেপ ফলো করলে শকপ্রাপ্ত ব্যাক্তিকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব। চলুন শুরু করি: 

১. আলাদা করুন

বৈদ্যুতিক শক এর প্রাথমিক চিকিৎসার প্রথম স্টেপ হলো ব্যাক্তিকে কারেন্টের লাইন থেকে আলাদা করা। এক্ষেত্রে কি কি ব্যবহার করবেন সে-সম্পর্কে আমরা ইতিমধ্যেই আলোচনা করেছি। মনে রাখবেন এই কাজে আপনাকে ২ টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। একটি হলো ভোল্টেজ হাই কিনা এবং অপরটি হলো ভোল্টেজ লো কিনা। মূলত হাই ভোল্টেজের লাইন ১৮ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত আর্ক করার ক্ষমতা রাখে। এমনটা যদি হয় তাহলে কোনোভাবেই বিপদগ্রস্ত ব্যাক্তির কাছে ঘেষা যাবে না। অন্যদিকে লাইন যদি হয় লো ভোল্টেজের সেক্ষেত্রে মেইন লাইনের সার্কিট বোর্ডে পাওয়ার বন্ধ করে, প্লাগ থেকে তার আলাদা করে ফেলবেন। এরপর যেকোনো রাবার ম্যাট, কাগজ কিংবা শুকনা গাছের সাহায্যে ব্যাক্তিকে কারেন্ট লাইন থেকে আলাদা করে ফেলবেন। 

২. রিয়াকশন বুঝুন

যিনি কারেন্টের শক খেয়েছেন তাকে বাঁচাতে অবশ্যই তার অবস্থা বুঝতে হবে। তিনি কিভাবে রিয়েক্ট করছেন তা আঁচ করতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত টিপসগুলো ফলো করতে পারেন: 

  • নাম ধরে ডাকুন
  • কানের কাছে গিয়ে চোখ খুলতে বলুন
  • কানের লতিতে চিমটি দিন
  • কাঁধে আলতো করে চাপ দিন
  • পরিস্থিতি বিপজ্জনক না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে স্থান পরিবর্তন করবেন না 

৩. হাসপাতালে নিন

যদি কোনো ধরণের রিয়াকশন না পান সেক্ষেত্রে ব্যক্তির শ্বাসনালী খোলা আছে কিনা এবং তিনি শ্বাস নিচ্ছেন কিনা তা চেক করুন।  যদি শ্বাস নেন সেক্ষেত্রে দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। আর যদি শ্বাস না নেন সেক্ষেত্রে বুকে চাপ দেবার পাশাপাশি অ্যাম্বুলেস কল করুন। 

শেষ কথা 

মনে রাখবেন কারেন্ট শক লাগলে যে ভুলগুলো করা যাবে না তা মাথায় রাখার পাশাপাশি নিয়মিত ঘরের ইলেক্ট্রিসিটির লাইন চেক করিয়ে নিবেন।  এক্ষেত্রে ভালো কোনো মেকানিকের সাহায্য নিতে পারেন এবং কাজটি প্রতি ৫/৬ মাস পরপর সেরে নিতে পারেন। ফলে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই থাকবে না। সেক্ষেত্রে সেবার Electric & Plumbing সার্ভিসের সহায়তা নিতে পারেন।  আর হ্যাঁ! ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্র থেকে বাচ্চাদের সবসময় দূরে রাখার চেষ্টা করবেন। আসুন নিজে সতর্ক থাকি, ইলেক্ট্রিসিটির ব্যাপারে অন্যদেরও সতর্ক করি। এরকম ব্লগ আরও পেতে সেবা ব্লগ নিয়মিত ভিজিট করুন। 

Sheba.xyz app Appliance Repair service

Leave a comment

Casinos en Argentina con Depósito Mínimo de 1000 ARS